ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ জওয়ানদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ কেন উঠবে? সীমান্তে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানদের আচরণ নিয়ে এক মামলায় আজ এই মর্মেই প্রশ্ন করল সুপ্রিম কোর্ট। সীমান্তবাহিনীর ওপর অত্যাচারের অভিযোগ ওঠাই নয়, এ ব্যাপারে বিএসএফ আইন অনুযায়ী যে কোর্ট মার্শাল হয়, তা কার্যত লোকদেখানো বলেই আবেদনকারীর দাবি।
‘অপরাধ’ করলেও জওয়ানদের কোনও সাজা হয় না বলেই অভিযোগ। তাই বিএসএফ আইনের নির্দিষ্ট কয়েকটি ধারা বাতিল করে এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের সুবিচার প্রার্থনা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ নামে একটি সংস্থা। তাদের দাবি, ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে এ ধরনের প্রায় ২০০টি ঘটনা ঘটেছে। বিএসএফের সঙ্গে বচসায় বা মতপার্থক্যে জড়িয়ে অত্যাচারিত হয়েছে অনেকেই।
কিন্তু কেন এই অভিযোগ? আজ আবেদনকারীর আইনজীবী বিজনকুমার ঘোষের কাছে জানতে চান প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর, বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল এবং বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। আদালতে দাঁড়িয়ে আবেদনকারীর আইনজীবী বলেন, ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিএসএফের এক্তিয়ারে থাকে। তাই ওই এলাকার মধ্যে কর্তব্যরত কোনও বিএসএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, মহিলাদের যৌন নির্যাতন, এমনকী খুনের অভিযোগ উঠলেও তার বিচার হয় বিএসএফের কোর্ট মার্শালে।
যেখানে নির্যাতিতের পরিবার বা অভিযোগকারীর উপস্থিতির অধিকার নেই। কোনও (থার্ড পার্টি) সাক্ষীও সেখানে যেতে পারে না। অভিযোগকারীর পক্ষে কোনও আইনজীবীও উপস্থিত হতে পারে না। এটাই নিয়ম। তাই সেখানে সঠিক বিচার হয় না বলেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীর আইনজীবীর দাবি। তবে অত্যাচার যে হয়, তার প্রমাণ তুলে দিতে আবেদনকারীর আইনজীবী বিজনবাবু এদিন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি রিপোর্ট আদালতে তুলে দেন। যেখানে এ ধরনের ঘটনার জন্য বেশ কয়েকজন আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।
একইসঙ্গে তাঁর সওয়াল, এই মামলায় আগে বিএসএফসহ কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপ্রিম কোর্ট আগেই নোটিস পাঠিয়েছে। তারপর থেকে সীমান্তে এ ধরনের অত্যাচারের ঘটনার অভিযোগ কমেছে। তাই এ ব্যাপারে বিএসএফ আইনের নির্দিষ্ট কয়েকটি ধারা বাতিল করার দাবি করা হয়। কিছুক্ষণ মামলা শোনার পর প্রধান বিচারপতিও জানিয়ে দেন, আপনাদের আবেদন গ্রহণ করছি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত শুনব। বিএসএফের মতো সুরক্ষা বাহিনীর ওপর এমন অভিযোগ উঠবে কেন?
(উপরের লেখাটি বর্তমান সংবাদপত্রের ২১ শে এপ্রিলের সংখ্যা থেকে উদ্ধৃত)